রাতে ঘুম ভালো হওয়ার উপায় | অনিদ্রা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

আমরা জানি ‘Early to Bed Early to Rise’ এই নীতিটি অনুসরণ করা কতটা কঠিন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশই তাড়াতাড়ি ওঠার পরিবর্তে ঠিক বিপরীত কাজ করে, কখনও কখনও আমরা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। কারণ যাই হোক না কেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো, কারো সাথে কথা বলা, রাতে পড়াশুনা করা বা কোনো প্রোজেক্টে কাজ করা বা ঘুমের অভাবের কারণে। ফলে পর্যাপ্ত ঘুম সম্পূর্ণ হয়না এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার কাজ শুরু করতে বা করার পর সারাদিন অলসতা অনুভব হয়। সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন, কিন্তু আজকাল অনেকেই অনিদ্রার সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগটিকে ইংরেজিতে Insomnia বলা হয়।

এবং এইভাবে আপনি প্রতিদিন, প্রতিসপ্তাহে ক্লান্ত ও অসুস্থতা অনুভব করেন, এখন এরকম পরিস্থিতি হলে কোনোভাবেই কোনো কাজ বা আলাদা কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। সারাদিন অলস বোধ করা মোটেও ভালো জিনিস নয় এবং আমরা এটি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি, কারণ আমরা সকলেই কোনও না কোনও সময়ে এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এসেছি বা হয়তো এখন যাচ্ছি। তাই Bangla Calendar (apk kajal) -এর আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা ঘুম সপর্কিত বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কে আলোচনা করবো। এই প্রতিবেদনে আপনারা জানবেন- অনিদ্রা কী, অনিদ্রার প্রকারভেদ, ঘুম না হওয়া বা ঘুম না আসার কারণ এবং ভালো ঘুমের জন্য কয়েকটি যোগব্যায়াম ইত্যাদি সম্পর্কে। 

অনিদ্রা দূর করার প্রাকৃতিক উপায়

এই অনিদ্রা বিষয়টি আমাদের জীবনের খুব ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সাথে জড়িত। ঘুম না হলে রাতে বিছানায় অস্থিরভাবে পাশ বদল করতে হয়, যেটা মোটেও শান্তির নয়। তাই আমাদের সবার আগে ঘুম না আসার কারণ বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি সম্পর্কে জানতে হবে। তাহলে চলুন এক এক করে অনিদ্রা সম্পর্কিত বিষয়গুলি জেনে নেওয়া যাক-

অনিদ্রা কী 

  • যখন রাতে ঘুম আপনার জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি যখন আপনার ঘুমানোর সুযোগ থাকে এবং তবুও আপনি ঘুমাতে পারেন না। এই অবস্থাকে বলা হয় অনিদ্রা। 
  • এরকম অনেক সময় আমাদের সঙ্গে হয়, যে সন্ধ্যা থেকে একটা ঘুম ঘুম ভাব থাকে কিন্তু রাতে ঘুমাতে গেলে কোনোভাবেই ঘুম আসেনা। এটিও একপ্রকার অনিদ্রা। 
  • কিন্তু এক্ষেত্রে সব থেকে খারাপ বিষয় হল অনিদ্রা কখনো একা আসে না। এর সাথে সাথে অনেক রোগ ও সমস্যা।

যেমন-

  • শারীরিক শক্তি হ্রাস
  • ক্লান্তি
  • কোনো একটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে অক্ষমতা
  • হঠাৎ বা দ্রুত মেজাজ পরিবর্তন
  • কর্মক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি 

অনিদ্রার প্রকারভেদ

এই সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের গবেষণা এবং পড়াশোনার পর জানা গেছে, যে অনিদ্রা দু ধরণের।

  • প্রাথমিক স্তরের অনিদ্রা- এই ধরনের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অনিদ্রার সমস্যা রাতে ঘটে। তবে তারপর দিনের বেলায় আর কোনো সমস্যা দেখা যায়না। মানুষ অনেকটা স্বাভাবিক থাকে। 
  • দ্বিতীয় স্তরের অনিদ্র- এই ধরনের অনিদ্রায় অনিদ্রা ছাড়াও অনেক সমস্যা থাকে। এই সমস্যাগুলির মধ্যে ক্যান্সার, অম্বল, আর্থ্রাইটিস, বিষন্নতা এবং হাঁপানির মতো গুরুতর রোগও রয়েছে।
  • এটি একটি গুরুতর ধরনের অনিদ্রা হিসাবে বিবেচিত হতে পারে যখন আপনি কিছু নিয়ে বিরক্ত বা অস্থির থাকেন। কিন্তু ওই বিরক্ত বা অস্থির কারণ বা সমস্যাটি চলে যাওয়ার পর যদি আপনি ঘুমিয়ে পড়তে শুরু করেন, তাহলে সেটা তেমন বিপজ্জনক নয়।

ঘুম না হওয়ার কারণ 

কোনোভাবেই ভালো করে ঘুমোতে পারছি না, প্রতিদিনই এরকম ঘটছে, ভাবতে বাধ্য হচ্ছি কেন এমন হচ্ছে। কেন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না? ঠিকমতো কি খাওয়া হচ্ছেনা? বেশি চিন্তা করার কারণেই কি এমন হচ্ছে? ঘুম না হলে এরকম নানা ধরণের প্রশ্ন মনে আস্তে থাকে। তাই আমাদের প্রয়োজন ঘুম না আসার মূল বা প্রধান কারণগুলি সম্পর্কে জানা। নিদ্রাহীনতার পিছনে অনেক ছোটো বা গুরুতর সমস্যা থাকতে পারে যা উপেক্ষা করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

যদি রাতে অনিদ্রার সমস্যা হয় এবং আপনি কেবল পাশ বদল করেই আপনার রাত কাটাচ্ছেন, তবে এর পিছনে এই কারণগুলি থাকতে পারে-

1. স্লিপ অ্যাপনিয়া

স্লিপ অ্যাপনিয়া বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো একটি রোগ। স্লিপ অ্যাপনিয়া হল একটি ঘুমের ব্যাধি যার কারণে আপনি পর্যাপ্ত ঘুম নিতে পারেন না বা পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও ক্লান্ত বোধ করেন। রাতে ঘুমানোর সময় ঘন ঘন শ্বাসকষ্টের কারণে, আপনি ঘন ঘন জেগে ওঠেন যার কারণে আপনি ভালো মানসম্পন্ন ঘুম পেতে পারেন না এবং দীর্ঘক্ষণ ঘুমানোর পরেও আপনি পরের দিন অলসতা বোধ করেন।

2. মানসিক ও শারীরিক চাপ 

ঘুম না হওয়ার পিছনে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হতে পারে মানসিক চাপ। যখন মানসিক চাপ থাকে, তখন শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় যা একটি স্ট্রেস হরমোন। এ কারণে শরীর বিশ্রামের অবস্থায় থাকতে পারে না এবং মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে, যার ফলে ঘুমাতে অসুবিধা হয়। গবেষণায় আরও জানা যায়, যে মানসিক চাপকে ঘুম না হওয়ার সবচেয়ে বড়ো কারণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে এটাও বলা হয়েছে যে, যে জিনিসটি আপনার মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে তার ভূমিকাও আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত, আমরা জানি যে শারীরিক পরিশ্রম হলে ভালো ঘুম হয়। কিন্তু যদি কেউ সারাদিন জুড়ে খুব খুব শারীরিক পরিশ্রম করেন, সেক্ষত্রেও ঘুম না আসার সমস্যা হতে পারে। তবে এটি কোনো ভয়ের ব্যাপার না। 

3. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ

বিশেষ করে অফিসে কাজ করার সময়, যখন আমাদের এনার্জি ফুরিয়ে যায় এবং আমরা ক্লান্ত বোধ করি, তখন কফি আমাদের জন্য খুবই লোভনীয়। কিন্তু এর অত্যধিক পরিমাণ আমাদের শরীরের উপরও বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা যখন এটি সেবন করি, তখন ক্যাফেইনের প্রভাব আমাদের শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে থাকে। এটি আমাদের শরীরে অ্যাড্রিনাল হরমোন বাড়ায়, যার কারণে আমরা আবার সক্রিয় এবং উদ্যমী হয়ে উঠি। আমাদের শরীর থেকে এর প্রভাব কমতে শুরু করলেই হঠাৎ করে আমরা আবার ক্লান্ত বোধ করতে শুরু করি। তাই চা-কফি খাওয়া কমিয়ে দিন।

4. ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার করা

এই সাধারণ অভ্যাস ত্যাগ করা খুব কঠিন। ফোন থেকে নির্গত কৃত্রিম আলো এবং মাইক্রোওয়েভ মস্তিষ্কে সংকেত দেয় যে এটিকে জাগ্রত থাকতে হবে কারণ এটি দিনের আলোর মতো দেখায় এবং মাথায় নানা রকম কার্যকলাপ হয়। এই ফোন চালানোর প্রক্রিয়া আমাদের প্রাকৃতিক সার্কাডিয়ান ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায়। যার কারণে রাতে কম ঘুম হয় এবং তারপর সারাদিন ক্লান্ত লাগে।

5. জলশূন্যতা

আমাদের ব্যস্ত সময়সূচীর কারণে, আমরা প্রায়শই সারা দিন সঠিক পরিমাণে তরল গ্রহণ করতে ভুলে যাই। জল পানে আমাদের অসাবধানতাও আমাদের ক্লান্তি বাড়ায় এবং এক্ষেত্রে মাথাব্যথার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই কারণে আপনার দৈনন্দিন কাজ প্রভাবিত হয়। গবেষণা অনুযায়ী, দীর্ঘস্থায়ী ডিহাইড্রেশনও অনিদ্রার কারণ হতে পারে।

6. সপ্তাহান্তে দেরিতে ঘুমানো এবং দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা

আমরা সবাই সপ্তাহান্তে নিজেদেরকে এই উপহারগুলো দিয়ে থাকি। আমরা শুক্র ও শনিবার রাতে দেরি পর্যন্ত জেগে থাকি এবং টিভি, ওয়েব সিরিজ দেখি, যার কারণে পরের দিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। এর ফলে আমাদের ঘুমের চক্র ব্যাহত হয়। একে জৈবিক ঘড়িও বলা হয়। এর মানে হল যে, আমাদের শরীরের একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস রয়েছে যা আপনি সপ্তাহান্তে নষ্ট করেন এবং এটি ঘুমের দিকে পরিচালিত করে না।

7. আসীন জীবনধারা

আপনি যদি সারাদিন বসে কাজ করেন বা ডেস্কের কাজে থাকেন তবে এই একটি কারণ আপনার ঘুমকেও প্রভাবিত করে। আপনি যখন সারাদিন নিষ্ক্রিয় থাকেন বা খুব কম নড়াচড়া করেন, তখন এটি আপনাকে রাতে ভালো ঘুমাতে দেয় না, যার কারণে আপনি সারাদিন অলস এবং ক্লান্ত বোধ করেন। আপনি যদি ব্যায়াম করেন, তাহলে আপনি অনুভব করবেন যে ওয়ার্কআউট সেশনের পরে আপনি রাতে ভালো ঘুম নিতে পাচ্ছেন।

ভালো ঘুমের জন্যে ব্যায়াম

সবাই জানে যে ঘুম আমাদের শরীর ও মনের সঠিক কার্যকারিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি  আমাদের শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখে। যখন আমাদের শরীর র‍্যাপিড আই মুভমেন্ট (REM) এ ঘুমায়, তখন চোখ আমাদের বন্ধ চোখের পাতার নিচে দ্রুত গতিতে চলে যায় এবং এই সময়ে আমাদের শরীরের শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়া যেমন পেশী বিকাশ, প্রোটিন সংশ্লেষণ এবং টিস্যু মেরামত দ্রুত ঘটে। REM ঘুমের দীর্ঘমেয়াদী অভাব, হৃদরোগ, উদ্বেগ এবং ক্লান্তির ঝুঁকি বাড়ায়। কিছু মানুষের জন্যও আবার একটি আরামদায়ক বিছানা একটি ভালো ঘুমের জন্য যথেষ্ট নয়। আপনি যখন ছাদের দিকে তাকাচ্ছেন বা পরীক্ষা করছেন যে আপনার অ্যালার্ম বাজতে আর কত ঘণ্টা বাকি আছে, তখন একটি ভালো বিশ্রামের ঘুম পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আপনি যখন ঘুমাতে পারবেন না তখন বিশ্বের চিন্তায় হারিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে, এই সহজ যোগব্যায়াম ভঙ্গিগুলি চেষ্টা করুন এবং আপনার শরীরকে ঘুমাতে উৎসাহিত করুন।

1. বালাসন

পদ্ধতি:- গোড়ালির ওপর ভর দিয়ে বসুন। দুটি হাঁটুর মধ্যে দূরত্ব রাখুন, যাতে আপনার ধড় দুই পায়ের মধ্যে ফিট হতে পারে। তবে আপনার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ যাতে পরস্পরকে স্পর্শ করে থাকে, সে বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। শ্বাস ছেড়ে নিতম্ব আগের দিকে ঝোকান এবং ধড় সামনের দিকে নিয়ে আসুন। আপনার ললাট মেঝে স্পর্শ করবে। হাঁটুর মাঝখানে ধড় থাকবে। এবার সামনের দিকে হাত প্রসারিত করুন। হাতের তালু মেঝে স্পর্শ করলেও বাহু মেঝে স্পর্শ করবে না, এটি ওপরের দিকে থাকবে। লক্ষ্য রাখুন টেলবোনকে গোড়ালির দিকে অনুভব করতে পারছেন কী না। এই পজিশনে থেকে নিজের স্পাইন লম্বা করার চেষ্টা করুন। স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস চালিয়ে যাবেন এ সময়। কিছু ক্ষণ এ ভাবে থাকার পর নিজের আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।

উপকারিতা:- যাঁরা সদ্য যোগাসন শুরু করেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই যোগব্যায়মটি চাপ ও উত্তেজনা কম করতে সাহায্য করে। এসময় বুক, পিঠ ও কাঁধ চাপমুক্ত হয়। আবার দিনের বেলায় বা ওয়ার্ক আউটের সময় ক্নান্তি থাকলে, তা থেকেও মুক্তি দেয়। পিঠের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে এই যোগাসন। কারণ এর ফলে পিঠ, নিতম্ব, জঙ্ঘা ও গোড়ালি সামান্য প্রসারিত হয়।

2. পরিবৃত্ত পার্শ্বকোণাসন

পদ্ধতি:- মুখ নীচের দিকে রেখে চারপায়ী জন্তুর মত করে উপুর হয়ে থাকুন। দুই হাতের মাঝখানে ডান পা নিয়ে আসুন। বাঁ পা সোজা রাখুন এবং পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে রাখতে হবে। এ সময় বাঁ পায়ের গোড়ালি ওপরের দিকে থাকবে। শ্বাস ছেড়ে পেলভিককে নীচের দিকে রাখুন এবং ভূমির সঙ্গে সমান্তরালে রাখতে হবে ডান জঙ্ঘাকে। শ্বাস গ্রহণ করে ডান হাত ওপরে তুলুন। কাঁধ যেন সমান্তরালে থাকে, সে বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। 10-15 সেকেন্ড এ ভাবে থাকতে হবে।

উপকারিতা:- এই আসন স্পাইনকে পুনরুজ্জীবিত করে, হ্যামস্ট্রিঙ্গসকে প্রসারিত ও নমনীয় করে। এর পাশাপাশি জঙ্ঘা, কাভস, গোড়ালিকে টোন করে এবং পিঠের পেশীকে শক্তিশালী করে। এই আসনের ফলে মনোযোগ ও ভারসাম্য বৃদ্ধি পায় এবং টক্সিক নির্গত করে।

সতর্কতা:- অ্যাস্থমা, ডাইরিয়া, ভার্টিগো, মাইগ্রেন, ইনসমনিয়া, ঘাড় ও পিঠের আঘাত, নিম্ন বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে এই আসন করার আগে নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

3. বৃক্ষাসন

পদ্ধতি:- একটি পায়ে ভারসাম্য রেখে দাঁড়ান। অপর পা-টি মুড়ে জঙ্ঘায় সার্পোট দিয়ে রাখুন। মাথার ওপরে হাত তুলুন এবং সোজা ওপরের দিকে পয়েন্ট করে রাখুন। এর পর অঞ্জলি মুদ্রায় হাত রাখুন। স্থির দৃষ্টি রেখে বাঁ পায়ে ওজন স্থানান্তরিত করুন এবং ডান হাঁটুটিকে অর্ধেক মুড়ে অর্ধপদ্ম ভঙ্গিতে রাখুন। কিছুক্ষণ এ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। তার পর একইভাবে ডান পায়ে দাঁড়িয়ে এবং বাঁ পা মুড়ে এই আসনটি করুন।

উপকারিতা:- এই আসনের সাহায্যে মন ও মস্তিষ্কে ভারসাম্য পুনঃস্থাপিত হয়। এর ফলে পা শক্তিশালী হয়। শুধু তাই নয় এই আসন পেলভিক স্থায়িত্ব গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং পা ও নিতম্বের হাড় মজবুত করে। প্রতিটি পায়ে শরীরের পূর্ণ ভারসাম্য স্থানান্তরিত করার ফলে পায়ের লিগামেন্ট ও টেন্ডন মজবুত হয়। পাশাপাশি জঙ্ঘা, পায়ের কাফ পেশী এবং গোড়ালিও মজবুত করে এই আসন। এর ফলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

4. ভুজঙ্গাসন

পদ্ধতি:- নিজের পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন। হাতের পাতা রাখতে হবে বুকের পাশে, বাহু থাকবে শরীরের কাছে এবং কনুই বাইরের দিকে পয়েন্ট করবে। শ্বাস নিন এবং মাথা, গলা ও কাঁধ ওপরে তুলুন। হাতের ওপর ভর দিয়ে শরীরের ঊর্ধ্বাংশ ওপরের দিকে তুলতে থাকুন। স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া চালাতে চালাতে ওপরের দিকে দেখুন। পেট যাতে ওপরে না-ওঠে, অর্থাৎ মেঝে ছুয়ে থাকে। ৫ সেকেন্ড এ ভাবে থাকতে হবে। ধীরে ধীরে পেটের ওপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন। এক দিকে মাথা ঘুরিয়ে দুহাত শরীরের পাশে রেখে বিশ্রাম নিন।

উপকারিতা:- এই আসনের ফলে স্পাইন, নিতম্ব, নিতম্বের পেশী বুক, পেট, কাঁধ, ফুসফুস মজবুত হয়। এর ফলে রক্ত সংবহন উন্নত হয় এবং ব্যক্তি চাপমুক্ত হতে পারে।

5. উষ্ট্রাসন

পদ্ধতি:- ম্যাটের ওপর হাঁটু গেড়ে বসে পড়ুন। হাঁটু ও পা সমান ভাবে রাখুন। এবার নিতম্ব আগের দিকে আনতে আনতে পিঠ পিছনের দিকে ঝোকান। মাথা ও স্পাইন পিছনের দিকে যতটা সম্ভব ঝুকিয়ে রাখুন। দুই পায়ের পাতার ওপর দুই হাত রাখতে হবে। শরীর ও পিঠের পেশীগুলিকে স্বস্তি দিন। এ ভাবে কয়েক সেকেন্ড থাকতে হবে। তার পর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন।

উপকারিতা:- কাঁধ ও পিঠ স্ট্রেচ ও মজবুত করা থেকে শুরু করে নিতম্ব মজবুত করা এবং নিতম্বের ফ্লেক্সরস স্ট্রেচ করে এই আসন। শুধু তাই নয় শ্বাসপ্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় উন্নতি ঘটায় এবং হজম শক্তি উন্নত করে। এটি ভার্টিব্রাকে শিথিল করে, নীচের দিকের পিঠের ব্যথা থেকে স্বস্তি দেয়। পাশাপাশি অঙ্গভঙ্গি উন্নত করে এবং জঙ্ঘার মেদ ঝরাতে সাহায্য করে।

Credit – kolkatacorner