মহিলাদের শ্মশানঘাটে না যাওয়ার ৫ টি কারণ || হিন্দু ধর্মে মহিলাদের শ্মশানঘাটে যাওয়া বারণ কেন?

বন্ধুরা হিন্দু ধর্মে মোট ১৬ টি সংস্কার হয়। এই সংস্কারের অন্তর্গত একটি অন্যতম সংস্কার হল – ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার অন্তিম সংস্কার করা। যা কোনো ব্যাক্তির জীবনের ১৬ নম্বর সংস্কার বলে খ্যাত।

বন্ধুরা আপনারাও হয়তো অনেক অন্তিম সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আপনার মনে হয়তো এই প্রশ্নটা জেগেছে-

হিন্দু ধর্মে মহিলাদের শ্মশানঘাটে কেন যেতে দেওয়া হয় না ?    

আজকের এই লেখাটিতে আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব – হিন্দু ধর্মে মহিলাদের শ্মশানঘাটে যাওয়া বারণ কেন। যার বর্ণনা গরুড় পুরাণে বিস্তারে করা হয়েছে।

প্রথমতঃ – বন্ধুরা গরুড় পুরাণ অনুযায়ী পুরুষের তুলনায় মহিলাদের নরম হৃদয় মানুষ বলে মনে করা হয়। আর এটা মানা হয় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর শ্মশান ঘাটে তার মুখাগ্নি করার সময় যদি কেউ কান্না করে তাবে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় না। পুরুষের তুলনায় মহিলারা নরম হৃদয়ের মানুষ, সেইজন্য এইরকম সময়ে তাদের কান্না করাটা আবশ্যিক। এটাই কারণ মহিলাদের শ্মশান ঘাট থেকে দূরে রাখার।

দ্বিতীয়তঃ–  বন্ধুরা আপনারা হয়তো দেখেছেন মহিলাদের চোখ দিয়ে তাড়াতাড়ি জল ঝরে পড়ে। এমত অবস্থায় যদি ওই মৃত ব্যক্তি মহিলার পরিচিত কেউ হন তাহলে মহিলার কান্না করাটা আবশ্যিক। সুতরাং সেই সময় সেই মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি মিলতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। এই জন্য মহিলাদের শ্মশানঘাটে যাওয়া মানা বলে মনে করা হয়।

তৃতীয়তঃ – অনেকসময় চিতায় আগুন ধরার পর মৃত ব্যক্তির শরীর যখন পুরতে থাকে তখন বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ আসে, যা থেকে মহিলারা ভয় পেতে পারে। এই জন্য মহিলাদের এই প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখাই উচিত বলে মনে করা হয়ে থাকে। এছাড়াও শ্মশান ঘাট খুবই ভয়ানক একটি জাগা বলে মনে করা হয়। এই স্থানে এমন অনেক জিনিসই দেখা যায় যা মহিলা এবং বাচ্চাদের জন্য ঠিক নয়। উদাহরণ হিসেবে- মুখাগ্নি করার পর যখন মৃতদেহটি পুরতে থাকে তখন সেই মৃতদেহটিকে ডান্ডা দিয়ে জোড়ে জোড়ে মারা হয়, এমন দৃশ্য বাচ্চা এবং মহিলাদের কাছে খুবই ভয়ানক। এতে মহিলা এবং বাচ্চাদের মানসিক স্থিতি তে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। 

চতুর্থতঃ – গরুড় পুরাণ অনুযায়ী শ্মশান ঘাটে অশুভ আত্মার বাস হয়, যা পুরুষ অপেক্ষা মহিলাদের শরীরে দ্রুত এবং তাড়াতাড়ি প্রবেশ করতে সক্ষম। কেননা মহিলাদের হৃদয় খুবই কোমল হয়।

পঞ্চমতঃ – এছাড়াও আরেকটি কারণও রয়েছে মহিলাদের শ্মশান ঘাটে না যাওয়ার। মৃত ব্যক্তির অন্তিম সংস্কার করার পর পরিজন পুরুষদের মুণ্ডন করতে হয়। কিন্তু হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মহিলাদের মাথার চুল কেটে মুন্ডন করা অশুভ বলে গণ্য। সেই অনুযায়ী মহিলাদের শ্মশান ঘাটে যাওয়া বারণ।

বন্ধুরা আজকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে আমরা আমাদের পরম্পরা থেকে ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছি। যার ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারেই উচিত নয়। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে মহিলারা শ্মশানঘাটে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এটা করা একদমই উচিত নয়। আমাদের ধর্মে যে সমস্ত নিয়ম এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার পেছনে কোনো না কোনো বড় কারণ অবশ্যই থাকে।

গরুর পুরাণে এটাও বলা হয়েছে শ্মশানঘাটে অনেক অশুভ অশরীরী আত্মা থাকে, যা জীবিত ব্যক্তির মধ্যে প্রবেশ করার সুযোগ খুঁজে বেড়ায়। আর এদের জন্য ছোট বাচ্চা অথবা মহিলারা বিশেষ করে কুমারী মেয়েরা একটি সহজ শিকার। এই সমস্যা এড়ানোর জন্য মহিলা এবং ছোট বাচ্চাদের শ্মশানে যেতে বারণ করা হয়। বন্ধুরা আপনারা যদি ভূত-প্রেতে বিশ্বাস করেন তাহলে এই কারণটিকে আপনি আরো ভালোভাবে হয়তো বুঝতে পারবেন। মনে করা হয় ভুত-প্রেত কুমারী মেয়েদের ওপর নিজের প্রভাব বেশি পরিমাণে ফেলে এবং তাদেরকে নিজের বশে করে তার শরীরে প্রবেশ করে। আর ভূত-প্রেতের প্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্য মহিলাদের শ্মশানঘটে যেতে মানা করা হয়।

আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন কেন হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী মহিলাদের শ্মশান ঘাটে যেতে মানা। প্রয়োজন বোধ করলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

Credit- amritakatha

home3